লালমনিরহাটে “শেকড়ে সৃজনে মুক্তি” লালমনি লোকউৎসব-১৪২৯ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় লালমনিরহাটের ফায়ার সার্ভিস রোড বাবুপাড়াস্থ এম. টি. হোসেন ইনসটিটিউটে লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ। এ সময় লালমনি লোকউৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব মুনীম হোসেন খন্দকার প্রতীক, সদস্য শামীম আহমেদ, উৎসব উপ-কমিটির আহবায়ক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, সদস্য সচিব মোঃ হেলাল হোসেন কবিরসহ লালমনিরহাটের কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ বলেন, একটি দেশ বা একটি জাতির আত্মপরিচয় তার লোকসংস্কৃতি। কৃষি প্রধান এই বাংলাদেশের কৃষি ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করেই উদ্ভব হয়েছে লোকসংস্কৃতির। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি এদেশের মূল সংস্কৃতির ভিত্তি। তাই বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ, দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এ দেশের ছাত্র-শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ সর্বোপরি আপামর জনসাধারণ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। পৃথিবীর বুকে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য বাঙালি ঠিক করে নেয় তার সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। তাই, আগামী প্রজন্মের মাঝে লোকচর্চার বহুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিতে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলা সদরে আমরা লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উত্তরবঙ্গের লোকসমাজের দৈনন্দিন জীবনধারণের বস্তুগত লোকসংস্কৃতি, মানসজাত লোকসংস্কৃতি, অনুষ্ঠানজাত লোকসংস্কৃতি এবং প্রার্থনামূলক লোকসংস্কৃতি বিষয়ে চর্চাবৃদ্ধি, গবেষণা, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন এবং সংস্কৃতিবান প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ আরও বলেন, লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের পথচলার শুরুতে ২ থেকে ৪ মার্চ, ২০২৩, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ৩দিনব্যাপী লালমনি লোকউৎসব ১৪২৯-এর আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবের মূলমন্ত্র শেকড়ে সৃজনে মুক্তি। বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ এম, টি, হোসেন ইনসটিটিউট প্রাঙ্গনে এ উৎসব উদযাপিত হতে যাচ্ছে।
লালমনি লোকউৎসব-১৪২৯ এম, টি, হোসেন ইনসটিটিউটে উৎযাপন করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সূফী মোহাম্মদ আরও বলেন, লালমনিরহাট একটি রেলওয়ে বিভাগীয় শহর। সুদীর্ঘ গৌরোবোজ্জ্বল ইতিহাসে সমৃদ্ধ উত্তরের এক ঐতিহ্যবাহী জনপদ লালমনিরহাট। দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনামলে পাশ্চাত্য সভ্যতার সাথে ভারতীয় সংস্কৃতির সমন্বিত বিকাশ ঘটেছিল এ জনপদে। লালমনিরহাটে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এয়ারপোর্ট ও বিভাগীয় রেলওয়ের সদর দপ্তর হওয়ার কারণে উচ্চপদস্থ দেশিয় ও বিলেতি সাহেবেরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। ফলে এদের পৃষ্ঠপোষকতায় লালমনিরহাটে একটি সুস্থ ও উঁচুমানের সাংস্কৃতিক আবহের বিকাশ ঘটেছিল, ১৯০৫ সালে গড়ে উঠেছিল ঘূর্ণায়মান নাট্যমঞ্চ পিয়ার্স ইন্সটিটিউট, যা পরবর্তীকালে নাম পরিবর্তনের কারণে এম, টি, হোসেন ইনস্টিটিউট নামে পরিচিতি পায়।
তিনি আরও বলেন, ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এম, টি, হোসেন ইনসটিটিউটের কার্যালয় বর্তমান রেল স্টেশনের পশ্চিমে উর্দূ স্কুলে স্থানান্তর করা হয়। এতে তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অবহেলায় পড়ে যায় ইনসটিটিউটটির ভবন চত্ত্বর। এ সুযোগে একশ্রেণীর ভূমিদস্যু লোভী শকুনের দৃষ্টি পড়ে এ অমূল্য ঐতিহ্যের উপর। এটি পরিণত হয় অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের অভায়ারণ্যে। দিনে দিনে হারিয়ে যেতে থাকে এর মূল্যবান সামগ্রী ও ঐতিহ্যবাহী সম্পদগুলো। দখল করে নেয় এর প্রাঙ্গন, খুলে নিয়ে যায় ইট, লোহা। আজ এর কঙ্কালসার অবস্থা দেখলে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই যে, এক সময় এর এত গৌরবময় অতীত ছিল, ছিল নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী, সাংস্কৃতিক অনুরাগী মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক, শিশু- কিশোর-যুবকদের প্রিয় প্রাঙ্গন।
তিনি আরও বলেন, লালমনিরহাটের সোনালী ঐতিহ্যের অন্যতম জীবন্ত সাক্ষী শতবর্ষী ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ এম. টি. হোসেন ইন্সটিটিউট আজ ধ্বংসপ্রায়। এ ইনসটিটিউট পুনঃসংস্কারের যৌক্তিক দাবি নিয়ে ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ এর ব্যানারে স্থানীয় সংস্কৃতিবান মানুষ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আন্দোলন চলমান। ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গন আবার সংস্কৃতিমনা সর্বস্তরের মানুষের সম্প্রীতির তীর্থস্থানে পরিণত হোক এ দাবি আদায় কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ঐতিহ্যবাহী এম. টি, হোসেন ইনসটিটিউট প্রাঙ্গণে আগামী ২ থেকে ৪ মার্চ ২০২৩ লালমনি লোকউৎসব-১৪২৯ উদ্যাপন হতে যাচ্ছে।